****** এখানে দেশি বিদেশী ঔষুধ পাওয়া যায় ******

যোগাযোগ করুন, প্রোপ্রাইটর মোঃ মিজানুর রহমান, মোবাইল নাম্বার : ০১৭১৭০৩০৯৬১

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯

তেতুল খেলে কি উপকার হয় জেনে নিন

তেতুল খেলে কি উপকার হয় জেনে নিন। অনেকে মনে করেন তেতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়, জেনে নিন তেতুল খেলে কি আসলেই রক্ত পানি হয়? তেঁতুল বা তিন্তিড়ী এর বৈজ্ঞানিক নাম: Tamarindus indica, ইংরেজি নাম: Melanesian papeda এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভুক্ত লেবু জাতীয় ফলের গাছ। এটি একপ্রকার টক ফলবিশেষ।
অনেকেরই ধারণা, তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী। রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে।
Tamarind
Tamarind
চাটনি হোক কী অন্য কোনো পদ এই টক টক ফলটি যে রান্নায় পড়ুক না কেন কেল্লা একেবারে ফতে! সে পদটি যে চেটেপুটে একেবারে গলাধঃকরণ যে হবেই, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও এই ফলটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। ভাববেন না মজা করছি! বাস্তবিকই কিন্তু শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার।
আসলে এতে থাকা একাধিক Anti-Inflammatory উপাদান দেহের অন্দরে প্রদাহ কমানোর মধ্য দিয়ে একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে, ত্বকের পরিচর্যায় এবং আরও নানা শারীরিক উন্নতিতে এই ফলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রোগমুক্ত সুস্থ শরীর যদি পেতে চান, তাহলে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ দিন জমিয়ে তেঁতুল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ই এবং বি। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ডায়াটারি ফাইবার। এখানেই শেষ নয়, একাধিক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও দেখা মেলে এই ফলটিতে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, তেঁতুল আকারে খাট হলে কী হবে, গুণে সর্বগুণ সম্পন্ন! তাহলে আর অপেক্ষা কিসের।

তেতুল খেলে কি উপকার হয় জেনে নিন

১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় তেঁতুলে আছে ডায়াটারি ফাইবার। যা হজমে সহায়ক এসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে একেবারে সময় লগে না। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ‘বিলিয়াস সাবস্টেন্স’ যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে দীর্ঘ দিনের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল দারুণ কাজে আসে। এক কথায় পেটের অন্দরে ঘটে চলা ছোট-বড় প্রতিটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে এই ফলটি। ফলে যেকোনো ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
২. হার্ট চাঙা হয়ে ওঠে একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে তেঁতুলের অন্দরে থাকা একাদিক ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কোনো খামতিই রাখে না। তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কোনো সুযোগই থাকে না। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তেঁতুল খাওয়া কতটা জরুরি।
৩. রক্তপ্রবাহের উন্নতি ঘটে তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনটা হওয়ার কারণে একদিকে যেমন প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি রক্তশূন্যতার মতো রোগও দূরে পালায়।

৪. স্নায়ুর কর্মক্ষমতা বাড়ে বি কমপ্লেক্স হলো এমন ভিটামিন, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র স্নায়ু কোষের শক্তি বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞানীয় কর্মকাণ্ডের উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, তেঁতুলে বি কমপ্লেক্স ভিটামিনটি রয়েছে প্রচুর মাত্রায়।
৫. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক এসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ক্ষুধা কমে যায়। আর একবার কম খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে সময় লাগে না।

তেঁতুল খেলে কি রক্ত পানি হয়?

অনেকেই বলে থাকেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। এ কথাটির উদ্ভব কীভাবে হলো, সেটি জানি না। তবে কথাটা যে ঠিক নয়, এটা সত্য। রক্তকে পানি করে দেওয়ার মতো কোনো উপাদানই তেঁতুলের মধ্যে নেই।
এবার রক্ত ও পানির আয়োনিক অবস্থাটা একটু দেখা যাক। রক্তের পিএইচ ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৪ আর পানির পিএইচ ৭। রক্ত ও পানির পিএইচ খুব কাছাকাছি মনে হলেও এ দুটির পিএইচ এক হওয়ার আশঙ্কা, অর্থাৎ রক্তের পিএইচ সহজেই কমে আসার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, রক্তের রয়েছে বাফার সিস্টেম। এই বাফার সিস্টেমের কাজ হচ্ছে রক্তে এসিড বা অম্ল এবং অ্যালকালি বা ক্ষারের পরিমাণের তারতম্য হলে তাকে স্বাভাবিক রাখা। এই বাফার সিস্টেম ব্যর্থ না হলে পিএইচের তারতম্য ঘটবে না। আর শরীর মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত না হলে রক্তের পিএইচের তারতম্য ঘটার আশঙ্কা কম। আর সামান্য তেঁতুলে রক্তের পিএইচ এসে পানির সমান হবে, তা কোনো ক্রমে আশা করা যায় না।
এ ছাড়া পানির মধ্যে আছে শুধু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। আর রক্তের মধ্যে হাইড্রোজেন-অক্সিজেন ছাড়াও প্রচুর প্রোটিন ইলেকট্রোলাইটসহ আরো অনেক উপাদান রয়েছে। কাজেই শুধু পিএইচ সমান হলেই যে রক্ত শুধু পানি হয়ে যাচ্ছে, সেটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, পিএইচ কমলেও রক্তের অন্যান্য উপাদানও বিভিন্ন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। যা-ই হোক, আসল কথা হচ্ছে, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয় না। এটাই ঠিক কথা। তেঁতুল খেয়ে রক্তকে পানি করা সম্ভব নয়।
৬. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুণভাবে কাজে এসে থাকে। আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে নানা কারণে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই তো অনিয়ন্ত্রত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকরা।
৭. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন